আমীরে জামায়াতকে করা মিস্টার রনির প্রশ্নের জবাব

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৪৬:৫০ রাত

আসসালামু আলাইকুম,জনাব গোলাম মাওলা রনি।প্রথমেই আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ। আশা করি আপনি ভালো আছেন? আপনারা ভালো না থাকলে যে আমরাও ভালো থাকতে পারি না। তাই আপনাদের ভালো থাকাটা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। দুদিন হয় আপনার একটি লেখা বারবার চোখের সামনে উলোট পালোট খাচ্ছে। প্রথমবার পড়ার পর একবার মনে হয়েছিলো জবাব দেই। কিন্তু মন সায় দিলো না এই ভেবে যে কতকিছুই ত জামায়াত কে নিয়ে লেখা হয়।কই ? জামায়াত ত আর সবটির জবাব দেয় না। এগুলো নিয়ে ভাবারই সময় কোথায় জামায়াতের? কিন্তু বারেবারে লেখাটা চোখের সামনে আসাতে মন চাইলো প্রশ্নের জবাব দেই আপনাকে।

ইতিমধ্যে নানানজন নানান ভাবে জবাব দিয়েছে। বেশিরভাগই লিখেছে, আপনি না কি আপনার নেত্রীর কৃপা দৃষ্টির লাগি এই লেখাটি লিখেছেন। নির্বাচন না কি ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনের আগে না কি এভাবে লেখে প্রার্থীতা ভাগানোর ফন্দি করতেছেন আপনি।একজন আপনাকে হুমু এরশাদ সাহেবের সাথে তুলনা করেছে। জানিনা,এতে আপনার সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে কি না? আমি ধরে নিলাম,বৃদ্ধি পেয়েছে। শত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্টের সাথে তুলনা। তাদের কথা বিশ্বাস করতে পারতেছি না এবং আপনার লেখার ধরণ দেখে ফেলে দিতেও পারছি না।যে যাই ভাবুক লেখা নিয়ে জবাব একটা দেয়া দরকার। আমাকে আবার আপনি জামায়াতের কোনো পর্যায়ের নেতা মনে করবেন না। জামায়াতের সমর্থক মনে করতে পারেন। জবাব দেয়ার আগে আপনাকে একটি নিউজ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যে তারিখে আপনার লেখা প্রকাশিত হয়, ঠিক একই তারিখে কালের কন্ঠ (মানুষ যদিও আরো কতকিছুর কন্ঠ বলে থাকে) "নেতা আমলা পুলিশের জন্য জামায়াতের অশুভ ফাঁদ!" শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশ করেছে। আপনি পড়ে দেখবেন, অনেক রস আছে সেখানে। বিশেষ করে, জামায়াত শিবিরের টিম তরুনী মডেলদেরকে সংগে নিয়ে নেতা আমলাদের রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের চরিত্র হরণ করার ফাঁদ পেতেছে। এই কথাটা পড়ার পড়ে খুব মজা পেয়েছি। আপনার কী মনে হবে জানি না, আমার মনে হয়েছে তারা তাদের চরিত্রের সাথে সম্পর্ক রেখে নিউজ সাজিয়েছে। আমাদের দেশের নেতা আমলারা এতটাই পূত পবিত্র(!) যে তাদের চরিত্র হরণের জন্য মডেল ভাড়া করতে হচ্ছে। এই কথাটা কি মানুষ বিশ্বাস করবে? আরো কত গাঁজাখুরি কথা লিখেছে। প্রয়াত নেতা,সাবেক মন্ত্রী জনাব মহসিন আলীর মত করে কি আমিও এই সব সাংবাদিকদের গালি দিতে পারবো?

যাক,কথা লম্বা করে আপনার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে যাচ্ছি না। আপনার করা প্রশ্নের জবাবে আসি। আপনার প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে, ৭১ এ জামায়াত কেন হঠাৎ করে পাকিস্তানী জান্তার সাথে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নেমে পড়েছিল? এই প্রশ্নের সাথে আপনি চমৎকার কিছু সত্যও তুলে ধরেছেন।যেমন আপনি বলেছেন,"পুরো পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল অথবা সামরিক সরকারের সঙ্গে জামায়াতের তো কোনো দহরম-মহরম ছিল না। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময় পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের দৃশ্যমান কোনো প্রভাব প্রতিপতি ছিল না। ’৭১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জামায়াতের কোনো তত্পরতার খবর পাওয়া যায় না।" আপনার এই সুন্দর ও সত্য কথামালার মধ্যেই প্রশ্নের জবাব নিহিত। আপনার এই কথা থেকেই বুঝা যায়,শুধুমাত্র পাকিস্তানের অখন্ডতা আর ভারতের আধিপত্যের হাত থেকে বাংলার মানুষকে বাঁচানোর জন্যেই ততকালীন জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। আজ যে প্রশ্ন শুধু আপনি করছেন,সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য শুধু কি জামায়াতই দায়বদ্ধ? ১৯৭১ সালে সকল ইসলামী দল,আলেম-পীর এবং ইসলাম পন্থী ব্যক্তিমাত্রই, এমন কি অনেক বামপন্হী দল ও নেতা অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিল। শেখ মুজিব নিজেই ২৩ মার্চ-৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলেন। উচ্চপর্যায় গোলটেবিল বৈঠক করলেন। তাহা কে না জানে ? তারও আগে,১৯৪৭ সালে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ সহ ভারতের বড় বড় অনেক আলেম অখন্ড ভারত চেয়েছেন। তারা পাকিস্তান চাননি। এই আলেম সমাজকে কেউ ইসলামের দুশমন বলেনি ।ভারতের দালাল-হিন্দুদের দালাল,মুসলমানের শত্রু বলেনি।তাহলে,দোষটা শুধু জামায়াতের ঘাঁড়ে কেন? এই প্রশ্নের আরো কত জবাব বর্তমান প্রেক্ষাপটই দিয়ে যাচ্ছে।তাই কোনো সত্যিকার আক্বলমন্দ মানুষ এখন আর জামায়াতকে এই সব প্রশ্ন করে না।

দুই এবং তিন নং প্রশ্নের জবাবে শুধু এই কথা বলবো, দেশ এবং দেশের মানুষের প্রয়োজনে যে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী ছিলো জামায়াত সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে এবং সেসময়ে জামায়াতের সিদ্ধান্তগুলো দেশের মানুষের দ্বারা প্রশংসিতও হয়েছিলো।

চার নাম্বার প্রশ্নে আপনি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্যে জামায়াতকে দায়ী করেছেন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আপনার শরীরেও ত আওয়ামীলীগের রক্ত প্রবাহমান।বিধায় আপনি এই প্রশ্ন করতেই পারেন। তবে দেশের মানুষ জানে কারা এই সহিংসতা করেছে,ঘঠিয়েছে। আপনার দলের এক পক্ষ যখন আরেক পক্ষকে দলিলপত্র দেখিয়ে এসমস্ত সহিংসতার জন্য দায়ী করে তখন নিশ্চয় আপনারা কান ও চোখ বন্ধ করে রাখেন।

সব শেষে আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তাহলো, "সামাজিকভাবে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যবসায়িক কজে বিশ্বাস করলেও কেন রাজনৈতিকভাবে একচুলও বিশ্বাস করে না? কেন দেশের ৮৮ ভাগ মানুষ সামাজিকভাবে তাদের এড়িয়ে চলে এবং একান্ত প্রয়োজন না হলে কেন সামাজিক বা আত্মীয়তার বন্ধনে জড়াতে চায় না? বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক মিত্ররা কেন তাদের শুধু ব্যবহার করে কিন্তু বিশ্বাস ও আস্থায় রাখে না। কেন তাদের সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে মিত্ররা নিমন্ত্রণ পর্যন্ত জানান না?" এই প্রশ্নটা কি ২০০৬ সালের ২৮ শে অক্টোবরের আগে কোনোদিন আপনার মাথায় এসেছিলো? আসেনি।কারণ, তখন আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা আওয়ামীময় ছিলো না। আর এখন আওয়ামীময় হলেও আপনার প্রশ্নটার কোনো ভিত্তি নাই। কেননা, এখনো মানুষ জামায়াত শিবিরকে ভালবাসে। আপনার দল যখন জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীকে আস্টেপিস্টে বেঁধে রেখেছে, তখনো দেশের মানুষ

জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীকে রাতে গোপনে আশ্রয় দেয়, মায়েরা মুখে ভাত তুলে খাওয়ায় এবং শেষ রাতে এই নেতা কর্মীর জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলে চোখের পানি ফেলে।তাছাড়া আপনার এই প্রশ্নটা কতটা অসাঢ় তার প্রমানত পেছনের উপজেলা নির্বাচনে হয়ে আছে।

আপনার এই প্রশ্ন উত্থাপনে আরবী একটি প্রবাদবাক্য খুব মনে পড়ে। "কুল্লু সাইয়্যিন ইয়ারজিউ ইলা আছলি" প্রত্যেক জিনিষ তার মূলের দিকে ধাবিত হয়। লেখার শুরুতে আপনাকে মোবারকবাদ জানিয়েছিলাম এজন্য যে আপনারা যদি লেখালেখি করে,টক শোতে যদি জামায়াত শিবির নিয়ে আলোচনা করে নিয়মিত জামায়াত শিবিরের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিষয়: রাজনীতি

১৫০২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384350
৩১ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ০৭:১৮
চেতনাবিলাস লিখেছেন : সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
384360
০১ নভেম্বর ২০১৭ বিকাল ০৪:৫৪
শেখের পোলা লিখেছেন : চমৎকার! অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File