নিখুজের রহস্য এখনো অজানা কেন ?

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:০৭:৩১ দুপুর



লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেন , স্টুয়ার্ড মুজিব , জহির রায়হান , এবং তরুণ স্বপন কুমার চৌধুরী ,

নিখুজের রহস্য এখনো অজানা কেন ?

শহীদ লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন-আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং স্বাধীনতা

সারা বাংলাদেশের মানুষকে জানানো হল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তথা বাঙ্গালী জাতিকে পাঞ্জাবী শোষণের হাত থেকে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত করার স্বপ্নদ্রষ্টা নাকি ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। কিন্তু সেটা ঐতিহাসিক সত্য নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শেখ মুজিবকে রাতারাতি কিংবদন্তীর নায়ক করে তুলেছিল এতে কোন সন্দেহ না থাকলেও এর মূল রূপকার ছিলেন লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেন। এই তরুণ নৌবাহিনী অফিসারই প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের। পাঞ্জাবী শোষকদের কবল থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে হবে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে; এটাও তিনিই উপলব্ধি করেছিলেন পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদানের পরই। ১৯৫০ সালে তিনি মিডশিপম্যান হয়ে ইংল্যান্ডের রয়্যাল একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর কাজ আরম্ভ করেন। সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রথমে মাত্র ২জন সহচর নিয়ে শুরু হয় তার বিপ্লবী কর্মকান্ড। কাজে হাত দিয়েই তিনি উপলব্ধি করলেন সবচেয়ে আগে দরকার একজন রাজনৈতিক নেতার। কারণ একজন সামরিক অফিসার হিসেবে চাকুরিতে থেকে ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ হবে না তার।

তাছাড়া শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীতে গোপন সংগঠন গড়ে তুললেই বিপ্লব করা সম্ভব হবে না। সংগঠন গড়ে তুলতে হবে দেশের জনগণের মধ্যে। তার জন্য প্রয়োজন বহুল পরিচিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। সুপরিচিত নেতার ডাকেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে কর্মীরা। তিনি যোগাযোগ শুরু করলেন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সাথে। কিন্তু বেশিরভাগ নেতারাই তার প্রস্তাবে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। যারা দিয়েছেন তারা জুড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন শর্ত। তাদের গদি দিতে হবে। অনেকে তাকে পাগলও বলেছেন প্রস্তাব শুনে। ভয়ে আতঁকে উঠেছেন অনেক নামিদামী নেতা। ১৯৬৪ সালে তিনি শেখ মুজিবর রহমানের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করেন। শেখ মুজিব তার প্রস্তাব শুনে বলেছিলেন, যতটুকু সম্ভব পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবেন। এতটুকু পর্যন্তই এর বেশি কিছু নয়। ১৯৬৬ সালে কমান্ডার মোয়াজ্জেম চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন। এতে তার তৎপরতা আরো জোরদার করার সুযোগ পান তিনি। ১৯৬৭ সালের জুন/জুলাই মাসে তিনি তার দুই প্রতিনিধি স্টুয়ার্ড মুজিবর রহমান এবং জনাব আলী রেজাকে আগরতলাতে পাঠান ভারতীয় সাহায্যের আশায়। তার প্রতিনিধিদের সাথে ভারতীয় সরকারের আলোচনা তেমন ফলপ্রসু হয়নি। বিপ্লবী স্টুয়ার্ড মুজিবর রহমানকে স্বাধীনতার মাত্র একমাসের মধ্যে গুম করে ফেলা হয়। মুজিব সরকার কিংবা তার দল এ বিষয়ে বরাবরই এক রহস্যজনক নিরবতা অবলম্বন করে এসেছে। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে রাওয়ালপিন্ডি পাঠানো হয়। সেখানে পৌছে বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পারেন, পাকিস্তান ইনটেলিজেন্স সন্দেহ করছে যে কমান্ডার মোয়াজ্জেম রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এই খবর জানতে পেরে ছদ্মনামে ৭ই ডিসেম্বর ১৯৬৭ ঢাকায় চলে এসে তার ছোট ভাই এর সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে আত্মগোপন করে লুকিয়ে থাকেন। ৯তারিখ রাত প্রায় ১১টার দিকে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে চাকুরিরত ক্যাপ্টেন নূরুল ইসলাম শিশু (পরবর্তীতে ‘জেনারেল রাজপুটিন অফ বাংলাদেশ’) ও আরো কয়েকজন হঠাৎ করে বাড়িতে হানা দিয়ে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি তখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। নিয়ে যাবার সময় ক্যাপ্টেন নূরুল ইসলাম জনাব মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী কোহিনূর হোসেনকে বলেছিলেন যে, বিশেষ প্রয়োজনে তাকে ঢাকা ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘন্টা খানেকের জন্য। কিন্তু তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল ১৫ মাস পর। অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল তার উপর। দীর্ঘ ১৫ মাস অকথ্য অত্যাচার করেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ তার কাছ থেকে কোন কথাই বের করতে পারেনি। এর পরেই ১৯৬৮ সালের জুন মাসে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শুরু হয় বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ১নং আসামী কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। পরবর্তিকালে পাকিস্তানের অধিকর্তারা বুঝতে পারেন, কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান আসামী বানানোর ফলে সারা বিশ্বের কাছে মিলিটারী ইন্টেলিজেন্সের ভীষণ বদনাম হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এক ঢিলে দুই পাখি মারার। জড়ানো হয় শেখ মুজিবর রহমানকে প্রধান আসামী হিসাবে। পাকিস্তান সরকার রাজনৈতিক মতলব হাসিলের লক্ষ্যে মামলা শুরু হওয়ার পর কমান্ডার মোয়াজ্জেমের নাম ১নং আসামী থেকে কেটে ২নং আসামীর জায়গায় সরিয়ে নেয়। আর এভাবেই ঐ মামলা সাপে বর হয়ে মুজিবকে গড়ে তুললো কিংবদন্তীর নায়ক হিসেবে।

কমান্ডার মোয়াজ্জেমের স্পষ্টবাদিতাকে শেখ মুজিব কখনই পছন্দ করেননি। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে ভোর ৬টার দিকে হানাদার বাহিনী তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বাড়ির সামনে গুলি করলেও তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে; যার হদিস আজ অব্দি তার পরিবার পরিজন পাননি।

আপোষহীন প্রতিবাদী কন্ঠের অধিকারীদের চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই তাদের মেরে ফেলা হয় আর সুবিধাবাদী আপোষকামীদের সবসময় বাচিঁয়ে রাখা হয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। সে হিসেবেই ২৬শে মার্চ প্রাণ দিতে হয়েছিল কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আর শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পাকিস্তানে।

ধর্মপ্রাণ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। নির্ভীক এই মুক্তিযোদ্ধা মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন তার দেশ ও জাতিকে। সপেঁ দিয়ে গেলেন প্রাণ স্বাধীনতার জন্য। দেশ স্বাধীন হল। শেখ মুজিবর রহমান একচ্ছত্র নেতা বলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করলেন, কিন্তু কমান্ডার মোয়াজ্জেমের ত্যাগের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেননি তিনি। কখনো সত্যকে তুলে ধরেননি জনগণের সম্মুখে। চুপটি মেরে থেকে সব কৃতিত্ব নিজেই হজম করে গেছেন নির্বিবাদে।

এই মামলায় মোট ৩৫ জনকে আসামী করা হয় । শেখ মুজিবুর রহমান, লে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, ষ্টুয়ার্ড মুজিব, এল এস সুলতানুদ্দিন আহমদ, এল এস সিডি আই নুর মোহম্মদ , আহমদ ফজলুর রহমান সি এস পি, ফ্লা সার্জেন্ট মফিজুল্লাহ, কর্পৌারাল আবুল বাশার, মোহাম্মদ আবদুস সামাদ, হাবিলদার দলিল উদ্দিন, ফ্লা সার্জেন্ট মোহাম্মদ ফজলুল হক, খন্দকার রুহুল কুদ্দুস সি এস পি, ভুপতি ভুষন চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী, বিধান কৃষ- সেন, সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, হাবিলদার ক্লার্ক মুজিবুর রহমান, ফ্লাইট সার্জেন্ট মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সার্জেন্ট জহুরুল হক, এটি মোহাম্মদ খুরশীদ, খান শামসুর রহমান সি এস পি, হাবিলদার এ কে এম শামসুল হক, হাবিলদার আজিজুল হক, এস এ সি মাহফুজুল বারী , সার্জেন্ট শামসুল হক, মেজর আবদুল মোতালেব , ক্যাপ্টেন এম শওকত আলী, ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা , ক্যাপ্টেন এ এন এম নুরুজ্জামান ,সার্জেন্ট আবদুল জলিল , মোহাম্মদ মাহববু উদ্দিন চৌধুরী, ফার্ষ্ট লে এম এম এম রহমান, সুবেদার এ কে এম তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী রেজা, ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দিন আহমদ এবং ফার্ষ্ট লে , আবদুর রউফ ।

সুত্র বই -

আরেকটি সুত্র -

আরেকটি সুত্র -

তরুণ স্বপন কুমার চৌধুরী -



১৯৭০ সলের ২১ আগস্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভায় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক স্বপন কুমার চৌধুরী প্রস্তাব করেন " স্বাধীন সমাজ তান্ত্রিক বাংলাদেশ " এবং সেই প্রস্তাবের পক্ষে উপস্থিত ৪৫ জনের মধ্যে ৩৬ জন পক্ষে এবং ৯ জন বিপক্ষে। নুরে আলম সিদ্দিকী , শেখ মনি সহ ৯ জন স্বাধীনতা পন্থীদের বিরদ্ধে মিছিল করেন , স্বাধীনতা পন্থীদের চীন রাশিয়ার দালাল উপাধি দিয়ে - স্লোগান করেন। যাও যাও চিনে যাও , বিপ্লবীদের খতম করো। শেখ মনিদের পক্ষে ছিলেন শেখ মুব্জিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রস্তাবকারী ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক স্বপন কুমার চৌধুরীর উপর ক্ষুব্দ হোন।

আসলে কত বড় সাহস , নেতার উপর নেতাগিরি করে। তাই দলীয় কোন্দলে আহত স্বপন কুমার চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে উঠিয়ে নিয়ে গায়েব করা হয়। আজো খোজ মিলে নাই ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক স্বপন কুমার চৌধুরীর। তত্কালীন ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি - শেখ মনি , তোফায়েল আহমেদ , নুরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে স্বপন কুমার চৌধুরীকে তুলে নিয়ে গায়েব করা হয়েছিল।



সূত্র - উদয় , বাংলাদেশ প্রথম স্বাধীন হয় , নির্মূল হোক সন্ত্রাস )

স্টুয়ার্ড মুজিব ও লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেন

কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন যাদের সাথে আলোচনা করতেন এবং তার পরিকল্পনার পক্ষপাতী মনে করতেন তাদের নাম ডায়রীতে লিখে রাখতেন। ইতিমধ্যে নৌ বাহিনীর কর্মী ষ্টুয়ার্ড মুজিব সদর দপ্তর থেকে পালিয়ে পুর্ব বাংলায় আসে এবং চট্রগ্রামের ডি সি খান শামসুর রহমান সাথে দেখা করে বলে , সে খুব বিপদের মধ্যে আছে, তার বিরোদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে তাই তার বাড়ী ফরিদপুরে যেতে পারছে না । আপনি যদি দয়া করে ফরিদপুরের জেলা প্রসাশককে একটা চিঠি লিখে দেন তবে আমি বাড়ি গিয়ে টাকা পয়সার ব্যবস্থা করতে পারি । শামসুর রহমান একটা ছোট চিঠি লিখে ষ্টুয়ার্ড মুজিব এর হাতে দেন যাতে লেখা ছিল যে, ষ্টুয়ার্ড মুজিব তার সাথে দেখা করে তার অসুবিধার কথা বলবে এবং সম্ভব হলে যেন তাকে সাহায্য করেন । চিঠিটি পাঠমাত্র ছিড়ে ফেলার নির্দেশ ছিল । ঐ চিঠি নিয়ে ষ্টুয়ার্ড মুজিব ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক এম এস রহমানের সাথে দেখা করে এবং চিঠিটি তার হাতে দেন । এম এস রহমান চিঠিটি ছিড়ে ফেলে দেন।

কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ডায়েরী কেমন করে সেনা গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গেল এবং স্টুয়ার্ড মুজিব কেন শামসুর রহমান সাহেবের ফরিদপুরের জেলা প্রসাশককে লেখা চিঠির ফটোকপি রেখে ছিল এবং সেটাও কিভাবে সেনা গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গেল সেটা জানা যায়নি ।

স্টুয়ার্ড মুজিব , জহির রায়হান নিখোজ নিয়ে তথ্য



মেজর এম এ জলিল অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইয়ে উল্লেখ করেছেন -

ভারতে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনেক কিছুই জানতে চেয়েছিলেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক এবং চিত্র নির্মাতা কাজী জহির রায়হান। তিনি জেনেছিলেন অনেক কিছু, চিত্রায়িতও করেছিলেন অনেক দুর্লভ দৃশ্যের। কিন্তু অতসব জানতে বুঝতে গিয়ে তিনি বেজায় অপরাধ করে ফেলেছিলেন। স্বাধীনতার উষালগ্নেই তাঁকে সেই অনেক কিছু জানার অপরাধেই প্রাণ দিতে হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। ভারতের মাটিতে অবস্থানকালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের চুরি, দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা, যৌন কেলেঙ্কারী, বিভিন্ন রকম ভোগ-বিলাসসহ তাদের বিভিন্নমুখী অপকর্মের প্রামাণ্য দলীল ছিল-ছিল সচিত্র দৃশ্য। আওয়ামীলীগের অতি সাধের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজী জহির রায়হানের এতবড় অপরাধকে স্বার্থান্বেষী মহল কোন যুক্তিতে ক্ষমা করতে পারে? তাই বেঁচে থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী রূপ দেখে যাওয়ার সুযোগ তাঁর হয়নি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩নং আসামী স্টুয়ার্ড মুজীবেরও ঘটেছিল এই পরিণতি। এই দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান, তেজোদীপ্ত যুবক স্টুয়ার্ড মুজীব আমার ৯নং সেক্টরের অধীনে এবং পরে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। তার মত নির্ভেজাল ত্বরিতকর্মা একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা সত্যিই বিরব। প্রচন্ড সাহস ও বীরত্বের অধিকারী স্টুয়ার্ড মুজিব ছিল শেখ মুজীবের অত্যন্ত প্রিয় অন্ধভক্ত। মাদারীপুর থানার অন্তর্গত পালং অধিবাসী মুজিবকে দেখেছি বিদ্যুতের মতই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটোছুটি করতে। কি করে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করা যায়, ভারতের কোন নেতার সাথে যোগাযোগ করলে মুক্তিযুদ্ধের রসদ লাভ করা যায় কেবল সেই চিন্তা এবং কর্মেই অস্থির দেখেছি স্টুয়ার্ড মুজিবকে। স্টুয়ার্ড মুজিব ভারতে অবস্থিত আওয়ামীলীগ নেতাদের অনেক কুকীর্তি সম্পর্কেই ছিল ওয়াকিফহাল। এতবড় স্পর্ধা কি করে সইবে স্বার্থান্বেষী মহল?

তাই স্বাধীনতার মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ঢাকা নগরীর গুলিস্তান চত্তর থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায় স্টুয়ার্ড মুজিব। এভাবে হারিয়ে যায় বাংলার আর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।

জহির রায়হান নিখোজ -

১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে হারিয়ে যান। তখন এ দেশের দায়িত্ব কার হাতে ছিল? পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের এতো দিন পর জহির রায়হান নিখোঁজ হলেন কেন?

জহির রায়হানের স্ত্রী সুমিতা দেবীর বক্তব্য ,সে দিন সকাল ৮ টায় জহিরের কাছে ফোন আসে। রফিক নামে যে ফোন করেছিল , সেই রফিকের সাথে আমিই জহিরের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। ইউসিস এ চাকুরী করত।

জহির রায়হান কে নিয়ে পান্না কায়সার ( জহির রায়হানের ভাই সহিদুল্লা কায়সারের স্ত্রী ) তার বইয়ে লিখেছেন - রফিক নামে একজন ফোন করেছিল। সহিদুল্লা কায়সারের আটকের খবর জানিয়ে সেই রফিক মিরপুরে যেতে বললে জহির রায়হান তার দাদাকে (সহিদুল্লা কায়সার) কে মিরপুরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সময় শাহরিয়ার কবির ও জহির একসাথে বেরিয়ে গেলে ও সবার ফিরে আসেন , কিন্তু জহির ফিরে আসেনি। বার বার ফোনে যোগাযোগ করি , আমাকে জানানো হয় , জহির সেনা হেফাজতে ভালো আছে , সন্ধায় আসবে। আর কোনো দিন ফিরে আসেনি।

হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন পান্না কায়সার তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে'

বড় ভাবী পান্না কায়সারের স্মৃতি থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি, ঐদিন সকালে মিরপুর থেকে একটি টেলিফোন পেয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, 'আপনার বড়দাকে খুঁজে পাওয়া গেছে, এসে নিয়ে যান।' প্রতারকের কণ্টস্বরটি বুঝে উঠতে পারেননি, তাই পান্না কায়সারকে বলেছিলেন, 'ভাবী, খবর পেয়েছি বড়দা মিরপুরে। তাকে আনতে যাচ্ছি।'

আর ফেরেননি জহির রায়হান।

কলকাতা থেকে জহির যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন ১৮ ডিসেম্বর,তখনও একনিষ্ট চলচ্চিত্র কর্মীর মত ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন বিজয়ের স্মৃতি। “পাগলের মত কাজ করে যাচ্ছে ক্যামেরা নিয়ে। ভুলেই গেল বাড়িতে ওর বড়দা-মা-ভাই-বোন অপেক্ষা করছে ওর জন্য” (হায়াৎ ২০০৭:৪৬)। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করেন যে, তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন এবং মুজিবনগর সরকারের অনেক গোপন তথ্যও ফাঁস করে দিবেন” জহিরের জীবনে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছেন বড়দা শহীদুল্লাহ কায়সার। এই বড়দাই তাকে পৃথিবী চিনিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর ব্যস্ত জহির খবর পেলেন তার বড়ভাই ১৪ তারিখ থেকে নিখোঁজ।



জহির রায়হানের বোন নাসিমা কবির যখন নিখোজ জহির রায়্হারের খুঁজে বড় বড় নেতাদের কাছে রাত দিন পাগলের মত ছুটে গেছেন। ১৯৭২ সালে পত্রিকা গুলোতে বেশ লিখা লিখি শুরু হয়। যে রফিকের ফোন পেয়ে জহির রায়হান ঘর থেকে বের হয়ে যেন , সেই রফিককে একদিন হটাত করে সপরিবারে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। জহির রায়হানের বড় বোন নাসিমা কবিরকে ডেকে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সরাসরি বললেন - জহির কে নিয়ে বেশি চিত্কার করলে তুমি ও নিখোজ হয়ে যাবে।

সূত্র - ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৩ দৈনিক আজকের কাগজ ,

১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৬ দৈনিক দিনকাল

আসলাম সনি রচিত "শত শহীদ বুদ্ধিজীবী" ,

জহির রায়হানের স্ত্রী সুমিতা দেবীর বক্তব্য ,

নিখুজের রহস্য এখনো অজানা কেন ?

লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেনকে নিয়ে কথা বলা হয়না। বললেই তো মহা আবিষ্কার। স্বাধীনতার স্বপ্ন , স্বাধীনতার দাবীদার গুষ্টির মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে।

তৎকালীন শেখ মুজিব সরকার সরকার কোন , কারনে জহির রায়হানকে এভা্বে প্লান করে হত্যা করে?

জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন কিছু দলিল সংগ্রহ করেছিলেন যাতে কারে তাদের মুখোশ হয়তো উম্মোচন হয়ে যেত।

স্টুয়ার্ড মুজিব ভারতে আওয়ামীলীগ নেতাদের অনেক কুকীর্তি সম্পর্কেই ছিলেন ওয়াকিফহাল। এতবড় স্পর্ধা কি করে সইবে স্বার্থান্বেষী মহল? তাই স্বাধীনতার মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ঢাকা নগরীর গুলিস্তান চত্তর থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায় স্টুয়ার্ড মুজিব।

বিষয়: বিবিধ

৩১৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

209333
১৮ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:১৭
কাঁচের বালি লিখেছেন : সেই কালকে জহির রায়হান কে মুজিব হত্যা করলো আর এই কালে হাসিনা সত্যের সৈনিক মাহমুদুর রহমান কে বন্দী করলো সেই সাথে নিরপরাধ মানুষগুলোকে যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলালো ! পার্থক্য কোথায় ???
আপনাকে ধন্যবাদ অজানা ইতিহাস জানানোর জন্য ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File