আল্লাহর রাসূলের জন্ম তারিখ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্যের জবাব

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫, ১০:৩৫:৫০ রাত

অনলাইনে নাস্তিকরা একটা কথা বলে বেড়াচ্ছে যে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি জারজ সন্তান ছিল। নাউযুবিল্লাহ। এক্ষেত্রে তারা যেই যুক্তিটা দেখাচ্ছে তা হল নবীজির পিতা আর নবীজির দাদা মানে আব্দুল মুত্তালেব নাকি একই দিনে বিয়ে করেছিলেন। আত তাবারী না ইবনে ইসহাকে লিখা আছে আব্দুল মুত্তালেব যখন তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ'র সাথে অয়াহাব ইবন আবদ মানাফের কন্যা আমেনার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান, তখন কথাবার্তার ফাঁকে উনি ওয়াহাবের ভাতিজি হালার রূপদর্শন করে মোহিত হন এবং তার পানিপ্রার্থী হন। অয়াহাব তাতে সম্মত হলে পিতা ও পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানও একই দিনে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ্যাৎ আব্দুল মুত্তালেব তার পুত্রবধূর আপন চাচাত বোনকে বিয়ে করেছিল। হামযা রাযিয়াল্লাহু আনহু যিনি আব্দুল মুত্তালেবের পুত্র ছিলেন ও রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচা ছিলেন উনি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমবয়সী না বড় এটা নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক আছে। হামযার বয়স নিয়ে অনেক রেওয়াতে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। নাস্তিকরা তাবারীর রেফারেন্সে বলতে চাচ্ছে হামযা নাকি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর চেয়ে ৪ বছরের বড় ছিল। কিন্তু বিয়ের ৬ মাসের মাথায় রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিতা আব্দুল্লাহ মারা যায় এটা নাকি অনেক সীরাত গ্রন্থেই লেখা আছে। এখন যদি আমরা হামযা কে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে ৪ বছর বড় ধরি সেই হিসাবে নাকি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতার মৃত্যুর ৪ বছর পর জন্ম নেয় নাউযুবিল্লাহ। কারন নাস্তিকরা বলতে চাচ্ছে নবীজির পিতা আব্দুল্লাহ আর নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালেব নাকি একই দিনে বিয়ে করেছে। এই সূত্র ধরে নাস্তিকরা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একজন জারজ সন্তান বলতে চাচ্ছে। এখন নবীজির পিতা আব্দুল্লাহ যদি সত্যিই বিয়ের ৬ মাসের মাথায় মারা যান তাইলে সেই হিসাবে আব্দুল্লাহ আর তার পিতা আব্দুল মুত্তালেব উভয়েই ৫৬৯ খৃষ্টাব্দেই বিয়ে করেছেন কারন নবীজির পিতা ৫৬৯ খৃষ্টাব্দেই মারা যান। আর নাস্তিকরা বলছে আব্দুল্লাহ আর আব্দুল মুত্তালেব একই দিনে বিয়ে করেছে। Prophet Muhammad (S) and His Family: A Sociological Perspective

By Aleem (pg 2-4) নাস্তিকদের দেয়া বইতে বলা আছে আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হয়েছে ৫৬৯ খৃষ্টাব্দে আর মুহাম্মদের জন্ম হয়েছে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে। তাইলে হামযা কিভাবে মুহাম্মদ থেকে ৪ বছর বড় হয় ? যদি হামযা নবীজি থেকে ৪ বছরের বড় হয় তাইলে আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হয়েছে ৫৬৬ সালে। এখন আল্লাহর রাসূল যদি ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন আর হামযা যদি উনার থেকে ৪ বছর বড় হয় তাইলে তো আব্দুল্লাহ আর আব্দুল মুত্তালেব কখনোই এক দিনে বিয়ে করতে পারেন না। কারন আমরা যদি ধরে নেই রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেছেন আর হামযা উনার থেকে ৪ বছর বড় হয় তাইলে অবশ্যই আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হয়েছে ৫৬৬ সালে। কারন কমপক্ষে ৫৬৬ খৃস্টাব্দে আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হলেই হামযা নবীজির থেকে ৪ বছর হয়। তাইলে নাস্তিকদের রেফারেন্স মতেই আমরা দেখছি যদি আব্দুল মুত্তালেব আর আব্দুল্লাহর বিয়ে একই দিনে হয় আর আল্লাহর রাসূল ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম নিয়ে থাকেন তাইলে কখনোই হামযা নবীজি থেকে ৪ বছর বড় হতে পারেন না। হামযা যদি নবীজি থেকে ৪ বছর হয় তাইলে অবশ্যই অবশ্যই হামযাকে ৫৬৬ খৃস্টাব্দে জন্ম হতে হবে অর্থ্যাৎ আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হতে হবে ৫৬৬ খৃস্টাব্দে। এছাড়া আর কোনভাবেই হামযা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ৪ বছর বড় হতে পারে না। নাস্তিকরাই বলছে আবদুল মুত্তালেব ৫৬৯ খৃষ্টাব্দে হামযার মা কে বিয়ে করছে আর নবীজির জন্ম হয়েছে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে। তাইলে তাদের রেফারেন্স মতেই তো আমরা দেখতে পাই হামযা আর নবীজি একই বয়সী। আর হামযা যদি নবীজি থেকে ৪ বছর হয় তাইলে অবশ্যই হামযাকে ৫৬৬ খৃস্টাব্দে জন্ম হতে হবে অর্থ্যাৎ আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে হতে হবে ৫৬৬ খৃস্টাব্দে। তাই আব্দুল মুত্তালেবের বিয়ে আর হামযার বয়স নিয়ে নাস্তিকদের রেফারেন্সটা যে ভুল তা আমরা ভাল করেই বুঝতে পারছি।

আর যদি সত্যিই আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ৪ বছর পর মুহাম্মদের জন্ম হত তাইলে তো কাফেররা তখনই নবীজিকে জারজ সন্তান বলত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি। কাফেররা কখনোই মুহাম্মদকে বলে নাই তুমি তোমার পিতার মৃত্যুর ৪ বছর পর হয়েছ। তাই স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে ইবনে ইসহাকের এই রেফারেন্সটা ভুল। আর ইবনে ইসহাক একজন শিয়া ছিলেন। ইবনে ইসহাকের সীরাতে অনেক তথ্যই ভুল আছে। আমেনা আব্দুল্লাহর সাথে ঠিক কত বছর সংসার করেছে এর কোন বর্ননা পাওয়া যায় না। আমাদের নবীও কখনো বলে নাই উনি ঠিক কোন বছরে জন্ম নিয়েছেন। আমি আর রাহীকুল মাখতুমে পেয়েছি নবীজির জন্মের ২ মাস পর উনার পিতা আব্দুল্লাহ মারা যায়। আমাদের নবী ৫৭০ না ৫৭১ সালে জন্ম নিয়েছে এটা নিয়েই তো অনেক বিতর্ক আছে। আমাদের নবী যেইখানে কোনদিন উনার জন্মের বছর সম্পর্কে বলে নাই তাই এইসব নিয়ে তো বিতর্ক থাকবেই। আর নবীজির জন্মের সময় কেউই জানত না উনি একজন নবী হবেন। তাই সেই সময়ের মানুষ উনার জন্ম তারিখ এগুলি লিখে রাখে নাই। আর তখন আরবে নির্দিষ্ট সন বছরের হিসাব চালু হয় নি। তাই দেখা যায় সব সাহাবীর বয়সই কয়েক বছর আগপিছু হয়। হিজরী সন তো নবীজির জন্মের পর চালু হইছে আর নবীজির জন্মের আগে আরবে খৃষ্টাব্দ সনের তেমন একটা ব্যবহার ছিল না। তাই দেখা যায় সব সাহাবীর বয়সের কিছু গরমিল আছে। আর অনেক রেওয়াতে পাওয়া যায় মুহাম্মদ ও হামযা সমবয়সী ছিল। উইকিপিডিয়াতেই বলা আছে মুহাম্মদ আর হামযা একসাথে দুগ্ধ পান করছে। মানে তারা সমবয়সী। www.en.wikipedia.org/wiki/Hamza_ibn_Abdul-Muttalib

তখন আরবে কোন দিনপঞ্জিকা ছিল না প্রচলিত কাহিনী থেকে তথ্য সুত্র নেয়া হত। তাই কে কখন বিয়ে করেছে বা কার জন্ম কত সালে হয়েছে এই জাতীয় তথ্যে ভুল থাকতেই পারে, আর এরকম কিছু হলে আরবের কাফেররাই প্রথম এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলত। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের খবর শুনার সাথে সাথেই আবু লাহাব তার দাসী সুহাইবাকে মুক্ত করে দিয়েছিল যেটা বুখারী শরীফেও উল্লেখ আছে। তো এখন যদি আমিনা সত্যিই মুহাম্মদ কে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ৪ বছর পর জন্ম দিত তাইলে কি আবু লাহাব এত খুশী হত আর আমেনাকে তার শ্বশুর আব্দুল্লাহ এত যত্ন নিত ? আমেনা তো তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে থাকত। যদি সত্যিই আমেনা তার স্বামী আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ৪ বছর পর মুহাম্মদের জন্ম দিত তাইলে তো তখই লঙ্গাকান্ড ঘটে যেত। নবীজিকে ছোট বেলা থেকেই কাফেররা জারজ সন্তান নামে অভিহিত করত নাউযুবিল্লাহ। মুহাম্মদের জন্মের সংবাদ শুনার পর উনার দাদা আব্দুল মুত্তালেব নবীজিকে কাবাঘরে নিয়ে যেয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও শোকর আদায় করেন। এই সময় আবদুল মুত্তালেব নবীজির নাম মুহাম্মদ রাখেন। তো আমেনা যদি আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ৪ বছর পর মুহাম্মদ কে জন্ম দিত তাইলে কি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মে তে উনার দাদা আব্দুল মুত্তালেব এত খুশী হত ? আর নাস্তিকদের দেয়া রেফারেন্সেই আমরা পাচ্ছি আবদুল মুত্তালেব যদি ৫৬৯ খৃষ্টাব্দে হামযার মা কে বিয়ে করে তাইলে হামযা আর নবীজি সমবয়সী হবে। তো এখন কোন নাস্তিক যদি আপনাকে নবীজির জন্ম নিয়ে কিছু বলে তাইলে আপনি তাকে জিজ্ঞাস করবেন আবদুল মুত্তালেব কত সালে বিয়ে করেছে তাইলে তার দেয়া রেফারেন্স মতেই আপনি তাকে ভুল প্রমান করতে পারবেন।

বিষয়: বিবিধ

৯৪৭৩০৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302374
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হাস্যকর সব নতুন আবিস্কার এর চেষ্টা এই সব তথাকথিত নাস্তিকদের।

ইবনে ইসহাক এর বিরুদ্ধে আপনার কথা ঠিক নয়। ইবনে ইসহাক কেই সিরাত এর প্রথম রচয়িতা বলে ধরা হয়। যদিও তার সকল বক্তব্যই অন্য তথ্য দিয়ে যাচাই করার সুযোগ আছে।
302375
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩০
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : হিজরী সন তো নবীজির জন্মের পর চালু হইছে আর নবীজির জন্মের আগে আরবে খৃষ্টাব্দ সনের তেমন একটা ব্যবহার ছিল না। তাই দেখা যায় সব সাহাবীর বয়সের কিছু গরমিল আছে।
302383
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:১৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : াাব্দুল মুত্তালিবের দাসীর নাম মনে করতে পারছি না।এই দাসী(মা আমিনার জন্যে নিয়োগকৃত ছিলেন) ইসলাম গ্রহন করেন এবং পরবর্তীতে মদীনায় বসবাস করেন। তাকে রসূল(সাঃ)মায়ের মর্যাদা দিয়েছিলেন। তিনি মুহাম্মদ(সাঃ)কে দুগ্ধ পান করিয়েছেন আবার হামজাকেও(রাঃ)...ফলে হামজা চাচা ছিলেন আবার তার(সাঃ) দুধ ভাইও ছিলেন---আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াসহ অনেক প্রতিষ্ঠিত সিরাতসমূহ
302385
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:১৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আর এসব জন্ম সাল নিয়ে সমস্যার কিছু নেই। আমরা দেখী সুন্নাহ, মানে কাজ। বাস্তবতা হচ্ছে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকলে এসব চাড়াল নাস্তিকরা ফাউল কথা বলেনা....মানে সহস পায়না।এটা যে ইচ্ছাকৃত শয়তানী তা তাদের গুরু,চেলা সবাই জানে
302391
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:৩৮
sarkar লিখেছেন : নাস্তিক রা কি বলে তাতে কিছু যায় আসে না।তবে যারা মিসলমানদের নাম দিয়ে নাস্তিকতা করে তারা যে জন্মপরিচয়হীন তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই।
302413
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:১৬
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : নাস্তিকদের কথাগুলা হালকা মনে করার কিছু নাই। তাদের কথা দ্বারা অনেকেরই ঈমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
302447
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৪
নারী লিখেছেন : নাস্তিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আগে নিজেদেরও জানতে হবে।নিজেরাই যদি না জানি তাহলে তো উত্তর দেওয়া যায়না।এজন্যই নিজে না জানলেই তখন কনফিউজডে পড়ে ইমান নষ্ট হয়। কারণ আমরা যেমনটা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য যুক্তি দেই তারাও ইমান নষ্ট করার জন্য যুক্তি দেখায়।
302496
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:০১
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : মুহাম্মদের জন্মের সংবাদ শুনার পর উনার দাদা আব্দুল মুত্তালেব নবীজিকে নিয়ে কাবাঘরে নিয়ে যেয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও শোকর আদায় করেন। এই সময় আবদুল মুত্তালেব নবীজির নাম মুহাম্মদ রাখেন। তো আমেনা যদি আব্দুল্লাহর ৪ বছর পর মুহাম্মদ কে জন্ম দিত তাইলে কি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মে তো উনার দাদা আব্দুল মুত্তালেব এত খুশী হত ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File