সালাতে সালাম ফেরানোর পর পঠিতব্য দু'আ

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ০৪:১৬:২৬ রাত

সালাতে সালাম ফেরানোর পর পঠিতব্য দু'আ

১. তিনবার أسْتَغْفِرُ اللهَ আস্তাগফিরুল্লাহ বলা। (মুসলিম:৫৯১)

২. اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَام (আল্ল-হুম্মা আন্‌তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম)1

৩. لاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’ (বুখারী:৮৪৪, মুসলিম: ৫৯৩)২

৪. لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ أَهْلَ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

"লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’ (সহীহ মুসলিম:৫৯৪)৩

৫.اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল ক্ববরি’’ (বুখারী: ২৬৬৭)৪

৬. سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

"সুবোহানাকাল্লাহুম্মা অবিহামদিকা আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইকা" (সুনানে নাসাঈ:১৩৪৪)৫

৭. ৩৩ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আহবার) ও একবার لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ বলা (সহীহ মুসলিম: ৫৯৭) অথবা ৩৩বার তাসবীহ, ৩৩ বার তাহমীদ, ৩৪ বার তাকবীর। অথবা ১০ বার করে। ৬

৮. তিনবার বলা- سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ‘আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’’ (২৭২৬)৭

৯. সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা। (মিশকাত:৯৬৯)৮

১০. اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫২২)৯

১১. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ"‏.‏

আল্লাহুম্মাগ ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখখারতু ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ‘লামু বিহি মিন্নী আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’’ (আবু দাউদ:১৫০৯)১০

১২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না-ফিয়ান অরিযক্বান তয়্যিবান অআ'মালান মুতাকব্বিলান (সুনানে ইবনে মাজাহ:৯২৫)১১

১৩. আয়াতুল কুরসী পাঠ (তাবারানীর মু'জামুল কাবীর:৭৫৩২)১২

১৪. বিতর সালাতের পর যে দু'আ:

سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ (সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস) তিনবার পড়া (নাসাঈ:১৬৯৯)১৩

টিকা:

1. সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

‘‘আল্ল-হুম্মা আন্‌তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। দ্রষ্টব্য: সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ মাসজিদ ও সলাতের স্থানসমূহ (كتاب المساجد ومواضعِ الصلاة) হা: ৫৯১, তিরমিযী: ৩০০, আবূ দাঊদ: ১৫১২, আহমাদ: ২১৯০২, দারিমী: ১৩৪৮,বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ২৯১৪, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৩৭-৭৩৮ তাছাড়া আইশা রা. থেকেও বর্ণিত আছে- দ্রষ্টব্য: মুসলিম:৫৯২, নাসাঈ: ১৩৩৯, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ: ৩১৯, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ২৯১৩,মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৩১৯৭

২. মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ফরয সলাতের পরে এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই! রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার। আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে)।দ্রষ্টব্য: সহীহ বুখারী,অধ্যায়ঃ নামাযের বৈশিষ্ট্য(أبواب صفة الصلاة » باب الذكر بعد الصلاة) হা: ৮০৮/৬৮৬২, মুসলিম: ৫৯৩, নাসাঈ: ১৩৪২, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৭৩, দারেমী: ১৩৪৯,মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:৩২০, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:২৯২৫, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৩২২৪, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৪২

৩.আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে এই মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ أَهْلَ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর।)।দ্রষ্টব্য:সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ মাসজিদ ও সলাতের স্থানসমূহ (كتاب المساجد ومواضعِ الصلاة) হা: ৫৯৪, নাসাঈ: ১৩৪০, আবু দাউদ: ১৫০৬, আহমাদ:১৫৬৭৩, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ: ৪২১২, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ২৯২৪, মুসনাদে বাযযার:২২০১/২২৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৪১

৪.সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার সন্তানদেরকে দু‘আর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেনঃ

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল ক্ববরি’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও ক্ববরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই)। দ্রষ্টব্য: বুখারী: অধ্যায়:জিহাদ, হা:২৬৬৭, তিরমিযী: ৩৫৬৭, নাসাঈ:৫৪৪৭, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৪৬, মিশকাত:৯৬৪

৫.আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন মজলিসে বসতেন অথবা সালাত আদায় করতেন তখন কিছু বাক্য উচ্চারণ করতেন। আয়িশা (রাঃ) তাকে উক্ত বাক্যসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, কেউ যদি ভাল বাক্য বলে তা হলে সেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মোহরস্বরূপ হবে। আর সে যদি অন্য ধরনের বাক্য বলে তা হলে সেগুলো তার জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে। (সে বাক্যগুলো হলো):

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

দ্রষ্টব্য: নাসাঈ: অধ্যায়ঃ সাহু [ভুল] (كتاب السهو)হা:১৩৪৪, আহমাদ:২৩৯৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব:১৫১৮, মিশকাত:২৪৫০

৬. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত সলাতের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহর তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আল্লাহর তাহমীদ বা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার তাকবীর বা আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করবে আর এভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর” (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও তার কোন অংশীদার নেই। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম) তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেয়া হয়। দ্রষ্টব্য: সহীহ মুসলিম:অধ্যায়ঃ মাসজিদ ও সলাতের স্থানসমূহ (كتاب المساجد ومواضعِ الصلاة) হা:৫৯৭, আবু দাউদ:১৫০৪, আহমাদ:৮৬১৬, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক: ৪৮৮, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ২৯৩৫, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ২৪৬, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৭২৯, মিশকাত:৯৬৭

অপর বর্ণনায় এসেছে-

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি‘আমাতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সলাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সলাত আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে তারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদ্গামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো ‘আমাল করবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুন হে আল্লাহর রসূল!

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রতি সলাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের ‘আমালের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ ‘আমাল করছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার করুণা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সলাতের পর দশবার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ ‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়।) দ্রষ্টব্য: মিশকাত: ৯৬৫

অপর বর্ণনায় এসেছে-

কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সলাতের পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমালকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো হলোঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। (মুসলিম:৫৯৬, মিশকাত: ৯৬৬)

৭. জুওয়াইরিয়াহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরবেলা ফাজরের সলাত আদায় করে তার নিকট থেকে বের হলেন। ঐ সময় তিনি সলাতের স্থানে বসাছিলেন। এরপর তিনি চাশতের পরে ফিরে আসলেন। এমতাবস্থায়ও তিনি উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিলাম তুমি সে অবস্থায়ই আছ। তিনি বললেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার নিকট হতে রওনার পর চারটি কালিমাহ তিনবার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করা হলে এ কালিমাহ চারটির ওযনই ভারী হবে। কালিমাগুলো এই—

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

“সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি আদাদা খল্‌কিহি ওয়া রিযা- নাফসিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি", অর্থাৎ- “আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির পরিমণ, তার আরশের ওযন পরিমাণ ও তার কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।" দ্রষ্টব্য: (সহীহ মুসলিম:অধ্যায়ঃ যিকর, দু’আ, তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা (كتاب الذكر والدعاء والتوبة والاستغفار)হা:২৭২৬, নাসাঈ: ১৩৫২, তিরমিযী:৩৫৫৫, ইবনে মাজাহ:৩৮০৮, আহমাদ:২৬২১৮, ২৬৮৭৫,সহীহ ইবনে খুযাইমাহ:৭৫৩, তাবারানীর মু'জামুল কাবীর: ১৬০-১৬১)

৮. উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি সলাতের শেষে ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্ না-স’’ ও ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’’ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন’’। (মিশকাত: অধ্যায়ঃ সলাত (كتاب الصلاة) হা:৯৬৯, আবূ দাঊদ: ১৫২৩, তিরমিযী:২৯০৩, আহমাদ:১৬৯৬৪, আল মুসতাদরাক: ৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৫৫, তাবারানীর মুজামুল কাবীর: ৮১১

৯. মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে নাঃ ‘‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ সালাত (كتاب الصلاة)হা:১৫২২, নাসাঈ:১৩০৩, আহমাদ:২১৬২১, মুসনাদে বাযযার:২৬৬১, আল মুসতাদরাক: ১০৪৮,৫২৪৩, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৭৫১, মু'জামুল কাবীর:১১০,২১৮, ২৫০)

১০. আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের সালাম ফিরানোর পর বলতেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ"‏

আল্লাহুম্মাগ ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখখারতু ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ‘লামু বিহি মিন্নী আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’’

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন যা কিছু আমি পূর্বে ও পরে করেছি, গোপনে, প্রকাশ্যে ও সীমালঙ্ঘন করেছি, এবং যা আমার চেয়ে আপনি অধিক জ্ঞাত। আপনিই আদি ও অন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (সুনানে আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ সালাত (كتاب الصلاة) হা:১৫০৯, মুসলিম:৭৭১, তিরমিযী:৩৪২৩, আহমাদ:৭৩১)

১১.উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে বলতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক ও এবং কবূল হওয়ার যোগ্য কর্মতৎপরতা প্রার্থনা করি। (সুনানে ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ সলাত কায়িম করা ও নিয়ম-কানুন (كتاب إقامة الصلاة والسنة)হা: ৯২৫, নাসাঈর সুনানুল কুবরা: ৯৮৫০)

১২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে মৃত্যু ব্যতীত কিছুই তাকে জান্নাত থেকে ফিরিয়ে রাখে না। (দ্রষ্টব্য: তাবারানীর মু'জামুল কাবীর: ৭৫৩২, নাসাঈর সুনানুল কুবরা: ৯৮৪৮

১৩.উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সলাতের সালাম ফিরাবার পর বলতেন, ‘‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’ অর্থাৎ ‘পাক-পবিত্র বাদশাহ খুবই পবিত্র’। (নাসায়ী বৃদ্ধি করেছেন যে, তিনবার দু‘আটি পড়তেন, শেষের বারে দীর্ঘায়িত করতেন) (দ্রষ্টব্য: মিশকাত: ১২৭৪, আবূ দাঊদ: ১৪৩০, নাসায়ী: ১৬৯৯, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর: ৪৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী: ৪৮৭০)

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: বিবিধ

৫৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File